
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধনের পর প্রথম সাপ্তাহিক ছুটির দিনে শুক্রবার (৩ নভেম্বর) রের্কড গাড়ি পার হয়েছে। এ সকাল সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ৭ হাজার ছোট বড় গাড়ী টানেল অতিক্রম করেছে। এতে প্রায় ২৫ লাখ টাকা টোল আদায় হয়েছে।
শুক্রবার রাতে বঙ্গবন্ধু টানেলের সহকারী প্রকৌশলী (টোল ও ট্রাফিক) তানভীর রিফাত ইউএনবিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, প্রথম সাপ্তাহিক ছুটির দিন আজ শুক্রবারে রাত ৮ টা পর্যন্ত ৭ হাজার গাড়ি টোল প্লাজায় এন্ট্রি হয়েছে। যেখান থেকে টোল আদায় হয়েছে। প্রায় ২৫ লাখ টাকা।”
এদিকে টানেল উদ্বোধনের পর প্রথম সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় গতকাল গাড়ির চাপ বাড়ে টানেলে। হাজার হাজার উৎসূক মানুষ ব্যাক্তিগত গাড়ি এবং ভাড়া গাড়িতে করে টানেল পরিদর্শন করেন। যানবাহনের চাপ বাড়ার ফলে বঙ্গবন্ধু টানেলের উভয় প্রান্তে এবং বাইরে ও ভীতরে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।

জানা যায়, টোল প্লাজায় টোল নিতে সময় লাগায় এ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে সাড়ে তিন মিনিটের টানেল পাড় হতে সময় লাগছে আধা ঘণ্টা থেকে ৪৫ মিনিট। টানেলের উভয় প্রান্তে অন্তত ৫ কিলোমিটার যানজট ছিল।
টানেলের টোল ম্যানেজার বেলায়েত হোসেন জানান, ছুটির দিনে সবাই টানেল ও তার আশেপাশের এলাকা ঘুরতে এসেছেন। এতে স্বাভাবিক দিনের তুলনায় যান চলাচল বেড়ে গেছে। ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। আমরা যান চলাচল স্বাভাবিক করতে কাজ করছি।
এর আগে গত ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেলের উদ্বোধনের পর দিন ২৯ অক্টোবর (রবিবার) ভোর ছয়টা থেকে টানেলটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। তবে যান চলাচলের প্রথম দিনেই বিরোধী দল গুলোর ডাকা হরতালের কারণে গাড়ি চলাচল কম ছিল।

প্রথম দিনে ২৪ ঘণ্টায় টানেলের ভিতর দিয়ে ৫,৪২৯টি বিভিন্ন ধরনের যানবাহন পারাপর হয়েছে। এসব যানবাহন থেকে টোল আদায় হয়েছে ১২ লাখ ১৩ হাজার ৩০০ টাকা। দ্বিতীয় দিনে যানবাহন পার হয়েছে মোট ৩ হাজার ২০৫টি। এতে টোল আদায় হয়েছে ৭ লাখ ১ হাজার ৩৫০ টাকা।
বঙ্গবন্ধু টানেলে চলতে পারবে ১২ ক্যাটাগরির যানবাহন। এজন্য সর্বনিম্ন টোল দুশো টাকা থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে চলাচল করতে পারবে না মোটরসাইকেল বা তিন চাকার যান।
টোল আদায়ে আনোয়ারা প্রান্তে ১৪টি বক্স বসানো হয়েছে। টানেলে সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চলতে পারবে। সেতু বিভাগের মতে, চালুর পর প্রথম বছরে প্রতিদিন এই টানেল পার হবে ১৭ হাজার ৩৭৪টি গাড়ি। যার মধ্যে ৩ হাজার ২১৮টি ভারী যান। ২০২৫ সালে প্রতিদিন পার হওয়া যানবাহনের সংখ্যা দাঁড়াবে ২৮ হাজার ৩০৫টিতে।

চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালে ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চার বছর ৭ মাসে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে শেষ হয়েছে বিশাল নির্মাণযজ্ঞ। নদীর তলদেশে মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। পাশাপাশি সংযুক্ত করা হয়েছে দুটি টিউব। টানেলের বাইরে অ্যাপ্রোচ সড়ক থাকছে প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার।