
চট্টগ্রামে রেলওয়ের শতকোটি টাকার জমি নিয়ে বিরোধে লিপ্ত হয়েছে দেশের দুই শীর্ষ শিল্প প্রতিষ্ঠান পিএইচপি ও কে এস আর এম গ্রুপ। জমি নিজেদের দখলে নিতে ইতোমধ্যে উভয় পক্ষ সংঘর্ষেও জড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও অনেকটা দিশেহারা। বিপাকে পড়েছে সংবাদ কর্মীরাও।
পিএইচপি গ্রুপ ইজারা মুলে এ জমি তাদের বলে দাবী করে আসছে। কেএসআরএম কর্তৃপক্ষ ইজারা হস্তান্তর মুলে এ জমি তাদের দাবী করলেও ইজারা শর্তানুযায়ী ইজারা সম্পত্তি হস্তান্তর যোগ্য নয় বলে জানান সীতাকুন্ড ওসি ইফতেখার ।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকে তা প্রত্যাহার করায় গনমাধ্যম কর্মীদের তোপের মুখে পড়েন কে এস আর এম’র শীর্ষ কর্মকর্তারা। রবিবার সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে বিষয়টি নিয়ে পিএইচপি’র বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন আহবান করে কেএসআরএম গ্রুপ।

সংবাদ সম্মেলনে কোন ধরনের লিখিত বক্তব্য না দিয়ে তড়িঘড়ি করে সংবাদ সম্মেলন শেষ করতে চাইলে আপত্তি জানান সংবাদ কর্মীরা। এসময় কেএসআরএম’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুন করিম গনমাধ্যম কর্মীদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন বিষয়টি নিয়ে উভয় প্রতিষ্ঠানের মালিক পর্যায়ে আলোচনা চলছে। এটি দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভূল বোঝাবোঝি বলে দাবী করেন তিনি।
উল্লেখ্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুন্ডের বাড়বকুন্ডে পিএইচপি গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজের পেছনে রেললাইনের পাশে রেলওয়ে’র ১৬০ একর জমির উপর পিএইচপি গড়ে তুলেছে বনায়ন প্রকল্প।
এই বনায়নের প্রবেশপথে রেলওয়ের আরো ১ দশমিক ৬৪ একর জমি রয়েছে। পিএইচপি’র বনায়নে যেতে হলে এ জমি পার হয়ে যেতে হয়। কেএসআরএম গ্রুপ সীমানা বেড়া দিয়ে ওই জায়গা দখলে নেয়। এরপর পিএইচপির লোকজন এসে সে বেড়া ভেঙে দেয়ার পর কেএসআরএম আবারও বেড়া দিয়ে জমি নিজেদেও দখলে নেয়। এভাবেই গত কয়েকদিন ধরে চলছে উভয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দখল আর পাল্টা দখল।
এ ঘটনায় পিএইচপি’র গ্রুপের লোকজনের হামলায় কেএসআরএম’র বেশ কয়েকজন আহত হয়। আবার পিএইচপি’র পক্ষ থেকে দাবী করা হয় কেএসআরএম’র লোকজনের হামলায় তাদের বেশ কয়েকজন লোক আহত হয়।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, দুই সপ্তাহ আগে কেএসআরএম আকস্মিকভাবে ১ দশমিক ৬৪ একর জায়গার সীমানা ধরে খুঁটি গেড়ে কাঁটাতারের বেড়া দেয়। এর ফলে পিএইচপির বনায়ন প্রকল্পে প্রবেশের পথ বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় পিএইচপির কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রতিবাদ করেন। জায়গার কাগজপত্র কি আছে দেখাতে বললে কেএসআরএম’র কর্মকর্তারা সেখান থেকে চলে যান। পরে পিএইচপির পক্ষ থেকে সেই সীমানা বেড়া উপড়ে ফেলে দেওয়া হয়।
এর পর কেএসআরএম বিষয়টি সুরাহার জন্য চট্টগ্রাম চেম্বার নেতৃবন্দের দ্বারস্থ হয়। চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য এম এ লতিফ চেম্বার ভবনে দুইপক্ষকে নিয়ে মধ্যস্থতা বৈঠকে বসেন। বৈঠকে উভয়পক্ষকে ইজারা নেওয়ার কাগজপত্র দাখিলের জন্য বলা হয়। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত উভয়পক্ষকে ওই জায়গা নিয়ে আর কোনো বিরোধে না জড়াতে বলা হয়।
কিন্তু ২৯ মার্চ আবারও কেএসআরএম’র পক্ষ থেকে খুঁটি গেড়ে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে জায়গাটি পূনরায় দখলে নেওয়া হয়। এসময় আবারও উত্তেজনার সৃষ্টি হলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ বিষয়ে সীতাকুন্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইফতেখার হাসান বলেন, রেলের জায়গা। পিএইচপি-কেএসআরএম উভয়পক্ষ বলে জায়গাটা তাদের। এটা নিয়ে ঝামেলা লেগেই আছে। সবসময় আমাদের সেখানে দৌঁড়াতে হয়। এত বড় বড় কোম্পানি, তারা যদি জায়গা নিয়ে মীমাংসায় আসতে না পারে, এটা আমাদের জন্যও সমস্যা।
পিএইচপির মহাব্যবস্থাপক (ভূসম্পত্তি) আমির হোসেনের দাবি, ২০০৫ সালে দুই ভাইয়ের কাছ থেকে ইজারা হস্তান্তর মূল্যে রেলওয়ের এই জায়গার দখলস্বত্ব পিএইচপির।
কেএসআরএম’র উপ মহা-ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন দাবি, ১৯৮০ সালে ইজারা নেওয়া নুরুল আলম নামে এক ব্যক্তির ২০১৬ সালে ইজারা হস্তান্তর মূল্যে রেলওয়ের এই জায়গার দখলস্বত্ব কেএসআরএম’র।
পিএইচপির মহাব্যবস্থাপক বলেন, কেএসআরএম জোর দেখাচ্ছে। জোর দেখিয়ে তো আর দুনিয়া চলে না। পিএইচপি কারও সঙ্গে শুধু শুধু বিরোধ সৃষ্টি করেছে, এমন রেকর্ড কি আছে ? জায়গা যদি তাদের হয় আমরা কেন দখল করতে যাব?
কেএসআরএম’র উপ মহা-ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমরা কারও জায়গা দখল করতে যাইনি। সকল বৈধ ডকুমেন্ট অনুযায়ী এটি আমাদের জায়গা। এটির সীমানা খুঁটি নড়বড়ে হয়ে যাওয়ায় তা বসানোর কাজ করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সকাল আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার আনোয়ারা জুট মিল গেট এলাকায় এ জায়গার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কেএসআরএম ও পিএইচপির সশস্ত্র লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়।