
রাঙামাটি জেলা প্রতিনিধিঃ
আগামী পহেলা মে রাত ১২টা থেকে কাপ্তাই হ্রদ থেকে সকল প্রকার মাছ শিকার, পরিবহণ ও বিপণনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। হ্রদের মাছের সুষ্ঠু প্রজনন ও বিকাশের স্বার্থে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। মাছের প্রাকৃতিক প্রজননের স্বার্থে প্রতিবছর এই প্রজনন মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। সাধারণত এই নিষেধাজ্ঞা তিন থেকে সাড়ে তিন মাস পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
আজ রবিবার রাঙামাটি জেলা প্রশাসন সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সর্বসম্মতিক্রমে নিষেধাজ্ঞার আদেশ জারি করেন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ।

এসময় বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন রাঙামাটি কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক নৌ-বাহিনীর কমান্ডার আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শারমীন আলম, সহকারি পুলিশ সুপার মোঃ ইউছুপ সিদ্দিকী, সদর উপজেলার ইউএনও মোছা: সুমনী আক্তার, এনডিসি সৈয়দ মাহাবুবুল হক, নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট শাহিদা আক্তারসহ মৎস্য অধিদপ্তর, কাপ্তাই হ্রদের মৎস্য ব্যবসায়ি, স্থানীয় জেলেদের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে বিএফডিসি কমান্ডার আসাদুজ্জামান জানান, এবছর বন্ধকালীন সময়ে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এবং পরবর্তী দুই মাস করে দুই দফায় কাপ্তাই হ্রদে পোনা মাছ অবমুক্ত করা হবে। এছাড়াও এবার বিএফডিসির নিজস্ব হ্যাচারীতে উৎপাদিত মাছে পোনার একটি অংশ হ্রদে পরীক্ষামূলকভাবে অবমুক্ত করা হবে। বাকি অন্তত ১৫ মেট্রিকটন পোনা অন্যত্র থেকে ঠিকাদারের মাধ্যমে সংগ্রহ করে হ্রদে ছাড়া হবে। জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ এর সভাপতিত্বে সভায় জানানো হয়, হ্রদে মাছের সুষ্ট প্রজনন, প্রাকৃতিকভাবে সঠিক সময়ে মাছের ডিম পরবর্তী পোনা উৎপাদনসহ অবমুক্তকরা পোনা মাছগুলো সঠিকভাবে বেড়ে উঠার লক্ষ্যে এবছর পহেলা থেকে আপাতত তিনমাস সময় পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে সকল প্রকার মৎস্য সম্পদ আহরণ ও বিপনন সম্পূর্নভাবে নিষিদ্ধ থাকবে। বন্ধ মওসুমে মাছ শিকার নিয়ন্ত্রণ করতে প্রশাসন এ বছর কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে জানিয়ে এবছর হ্রদে বন্ধ মৌসুমে মাছ শিকার রোধে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন জেলা প্রশাসক।
সভায় জানানো হয়, কাপ্তাই হ্রদে এবছর মৎস্য আহরণ ও বিপনন বন্ধ কালীন সময়ে কেউ বা কোন পক্ষ যদি অবৈধ উপায়ে মাছ ধরার কাজে জড়িত থাকে তাদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। এছাড়াও বন্ধ মৌসুমে পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত রাঙামাটির সকল বরফকল গুলোতে উৎপাদন বন্ধ থাকবে।
এদিকে, উক্ত সভায় কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য উৎপাদন ব্যাহতের অন্যতম উপদায়ক হ্রদে অবৈধ জাঁক অপসারনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে বর্তমানে হ্রদে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ হারিয়ে যাওয়া বেশ কয়েকটি প্রজাতির মাছের উৎপাদন আবারো শুরু হয়েছে জানিয়ে এই সফলতার জন্যে রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্সের পক্ষ থেকে রাঙামাটির বিএফডিসি কমান্ডার মোঃ আসাদুজ্জামানকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক এ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ মামুন। এসময় হ্রদে অবৈধ জাঁকের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত রাখার দাবিও করেন তিনি।
জবাবে সভার সভাপতি জেলা প্রশাসক মামুনুর রশিদ বলেন, কয়েক লক্ষ্য মানুষের জীবন-জীবিকায়নের অন্যতম মাধ্যম কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য সম্পদ রক্ষায় বর্তমান সরকার তথা রাঙামাটির জেলা প্রশাসন বদ্ধপরিকর। হ্রদের ব্যবসায়িদের উদ্দেশ্যে জেলা প্রশাসক বলেন, কাপ্তাই হ্রদের মাছ ধরে সেটি স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে হলে হয়তো রয়েলটি দিতে হবে, নয়তো মাছের দাম স্থানীয় জনসাধারনের নাগালের মধ্যেই রাখতে হবে।
তিনি বলেন, কোনো ইনভেষ্ট না করেই আপনারা হ্রদের মাছ আহরণ করছেন এবং সেটি সরকারকে রয়েলটি নাদিয়েই বাজারে চড়া মূল্যে বিক্রি করছেন এটা মানা যায়না। এই বিষয়ে শীঘ্রই রাঙামাটি জেলা প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিবে বলেও মন্তব্য করেন জেলা প্রশাসক। এদিকে হ্রদে অবৈধ জাঁকের ফলে প্রচুর পরিমানে উৎপন্ন হওয়া কচুরিপানার কারনে হ্রদে মাছের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি চলাচলে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে জানিয়ে এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সাথে নিয়েছে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক এই বিষয়টি সভায় উপস্থাপন করে এই ব্যাপারে কাপ্তাই হ্রদের মৎস্য ব্যবসায়িসহ বিএফডিসি, রাঙামাটি জেলা প্রশাসন ও মৎস্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধিসহ রাঙামাটি জেলা পরিষদের প্রতিনিধির মাধ্যমে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে ফান্ড সংগ্রহ করে স্থানীয় পর্যায়ে লোক নিয়োগ করে কাপ্তাই হ্রদ থেকে কচুরিপানা উত্তোলন করে হ্রদের উপরিভাগ স্থলে তুলে ফেলানোর সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। এই ব্যাপারে একটি কমিটি শীঘ্রই গঠন করার জন্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে নির্দেশনাও প্রদান করেন সভাপতি।