ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

বেগম খালেদা জিয়ার দৃঢ়তাই বিএনপির জিয়নকাঠি প্রাণশক্তিঃ কাদের সিদ্দিকী

.

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে ১২ মিনিট

.

শনিবার ছিল ৩ নভেম্বর জাতির ইতিহাসে এক নির্মমতম শোকের দিন। পৃথিবীর ইতিহাসে রাজনৈতিক নেতাদের হত্যার অসংখ্য ঘটনা আছে। কিন্তু ওভাবে জেলখানার ভিতর নিষ্ঠুর হত্যার কোনো ঘটনা নেই। ৩ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধের দিশারি চার জাতীয় নেতাকে নিউ জেলে হত্যা করা হয়। সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, এ এইচ এম কামারুজ্জামান সব থেকে নিরাপদ আশ্রয় জেলে নিহত হন। তার আগে ধানমন্ডিতে সপরিবারে হত্যা করা হয় দেশের পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। সেখানেও আকাশ-পাতাল ব্যতিক্রম। পৃথিবীর ইতিহাসে বহু রাজা, বাদশাহ, সম্রাট শত্র“র হাতে নিহত হয়েছে। অনেক প্রাসাদ তছনছ করা হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর পরিবারের মতো নির্মম হত্যা কোথাও হয়নি। তেমন কোথাও নেতার সঙ্গে নেতার স্ত্রীকে হত্যা করা হয়নি। সন্তান, আত্মীয়স্বজনকে হত্যা করা হয়নি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রে হয়েছে। পাকিস্তানফেরত কর্নেল জামিলকে ব্রিগেডিয়ার পদে উন্নীত করে এক ব্রিগেড সৈন্য দিয়ে রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের প্রধানকে রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। অস্ত্রশস্ত্র, এক ব্যাটালিয়ান সৈন্যসহ হেলিকপ্টার কর্নেল জামিলের নিয়ন্ত্রণে গণভবনেই ছিল। ভদ্রলোক এত অদক্ষ, ব্যর্থ, বঙ্গবন্ধুকে যেদিন হত্যা করা হয় সেদিন একজন সৈন্যও ব্যবহার করতে পারেননি। বঙ্গবন্ধুর ফোন পেয়ে লাল জামা গায়ে ভদ্রলোক ঘর থেকে ছুটেছিলেন। কর্নেল জামিলের স্ত্রী চিৎকার করছিলেন, ‘তুমি একা গিয়ে কী করবে? আর রিভলবারটাও নিলে না!’ এমন অদক্ষ লোককে বঙ্গবন্ধু তার সরকার এবং তাকে রক্ষার দায়িত্ব দিয়েছিলেন যে, নিজের ব্যক্তিগত অস্ত্র নিতেও ভুলে যায়। রাস্তায় গুলি খেয়ে তিনি মরেছেন। তিন দরজার গাড়িসহ তার লাশ এনে ফেলা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর বাড়ির পেছনে। বীর মহাবীর আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের মতো বা নেপোলিয়ান বোনাপাটের মতো ব্যর্থ লোকটিকে ব্যর্থতার জন্য কোনো শাস্তি পেতে হয়নি বরং বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সঙ্গে তার ছবি শোভা পায়- এই হলো বিবেচনা। বিমানবাহিনীর প্রধান এ কে খন্দকার মোশতাক সরকারের প্রতি অনুগত্য জানিয়েছিলেন। রক্ষীবাহিনী থেকে আনোয়ারুল আলম শহীদ, ফরিদপুরের মোল্লা, সেনাবাহিনী প্রধান শফিউল্লাহ, পুলিশের আইজি নুরুল ইসলাম, নৌবাহিনীর এম এইচ খান হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলেন মোশতাক সরকারকে সমর্থন ও সহযোগিতা করতে। এমনি ব্যর্থদের আওয়ামী লীগ পুরস্কৃত করেছে। ঠিক তেমনি বঙ্গবন্ধু হত্যার তো উপযুক্ত বিচার হয়নিই, অনেক আসামিকে আড়াল করা হয়েছে। যারা হত্যার নকশা করেছে তাদের খবর নেই। জেলহত্যাও তেমনি। যেদিন জাতীয় চার নেতা নিহত হন, সেদিন জেলের তালা কে খুলে দিয়েছিল, কার কথায় খুলে দিয়েছিল। জেলের আইজি, ডিআইজি, সুপার, জেলার তারা কী করেছিলেন? জাতীয় নেতাদের গুলি করে ঝাঁঝরা করে দুষ্কৃতিকারীরা যখন ফিরে যাচ্ছিল তখনো তাজউদ্দীন আহমদ জীবিত ছিলেন। পানি পানি করছিলেন। কে ছুটে গিয়ে বলেছিল, ‘স্যারেরা একজন মারা যায়নি, পানি পানি করছে।’ খবর পেয়ে ফিরে গিয়ে বেয়নেট খুঁচিয়ে তাজউদ্দীন আহমদকে হত্যা করেছিল। কেন কীভাবে কী কারণে কে ঘাতকদের এত প্রিয় ছিল, ‘স্যারেরা একজন পানি পানি করছে’, পানি না দিয়ে তাকে বেয়নেটে খুঁচিয়ে মারার জন্য ঘাতকদের কাছে গিয়েছিল? কারা সেদিন নিউ জেলে ডিউটি করেছিল, এসবে আগে থেকে কারও কোনো হাত ছিল কিনা এসব কি দেখার দরকার ছিল না? তাই বঙ্গবন্ধু অথবা জেলহত্যার বিচার এসব অনেকটাই লোক দেখানো। অনেক কিছু দেশের মানুষের কাছ থেকে আড়াল করা হয়েছে। হয়তো যেদিন আমরা থাকব না, সেদিন সবই পরিষ্কার হবে। মৃত্যুর পর লাশ, মায়ের পেটের বাচ্চা আর সত্যকে কখনো আড়াল করা যায় না। সেদিন গিয়েছিলাম যেখানে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল সেখানে, সেটা এখন জাদুঘর। একসময় যারা বন্দী ছিলেন তাদের সেই বন্দীশালা আজ দেশবাসীর শ্রদ্ধা নিবেদনের স্থান। আজ অনেক বড় বড় নেতা আছে, বঙ্গবন্ধুপ্রেমিক আছে, জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রেমিক তো অগণিত। কিন্তু দুর্ভাগা আমি বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে সঙ্গে বলেছিলাম, ‘খুনিরা কামাল-জামাল-রাসেলকে হত্যা করতে পারলেও বঙ্গবন্ধুকে নির্বংশ করতে পারেনি। আমি কাদের সিদ্দিকী বঙ্গবন্ধুর চতুর্থ সন্তান। পিতৃহত্যার বদলা নেবই নেব।’ চেষ্টা করে চলেছি দীর্ঘদিন।

’৯০-এর ১৬ ডিসেম্বর লাখ লাখ মানুষের ভালোবাসায় যখন দেশে ফিরি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের আমলে আওয়ামী লীগের সম্মতিতে আমাকে জেলে নেওয়া হয়েছিল। ঝিনাইদহ থেকে গ্রেফতার করে যশোর জেলে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ঢাকা জেলে এসেছিলাম ‘৯১ সালের মার্চের ১৯ বা ২০ তারিখ। প্রথম রাখা হয়েছিল নিউ জেলে ১৫ সেলে। সেখানে শেখ শহীদ, কাজী ফিরোজ রশীদ, মাহমুদুল হাসানসহ আরও অনেকে ছিলেন। দুই মাস ছিলাম যেখানে জাতীয় নেতাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল সেই ভবনের মাঝের সেলে। প্রকা- ঘর। থাকতে বেশ ভালো লাগত। গভীর রাতে মাঝে মাঝে জাতীয় নেতাদের সান্নিধ্য পাওয়ার মতো মনে হতো। গত ৩ তারিখ শনিবার সকালের দিকে জাতীয় নেতাদের সেই বন্দীগৃহ দেখতে গিয়েছিলাম, শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলাম।

১৫ সেল এখন অকেজো। চলার মতো নেই। জঙ্গলে ভরে গেছে। এমনই হয়। কখনো কখনো রাজপ্রাসাদ জঙ্গলে পরিণত হয়। নিউ জেল নেতাদের নিহত হওয়ার সেল যেহেতু মিউজিয়াম করা হয়েছে সেহেতু কিছুটা ঝকঝকে তকতকে। জাতীয় চার নেতার ঘর দেখে ভারাক্রান্ত মনে গিয়েছিলাম পিতার গৃহে। তার কাপ-পিরিচ-টেবিল-চেয়ার কাচের ঘরে সযতেœ রাখা হয়েছে। ‘৯১-এ যখন ছিলাম তখন প্রায় দিনই বঙ্গবন্ধুকে বন্দী রাখার ওয়ার্ডে যেতাম। তার বোনা গাছে আম ধরেছে, তার গাছে ফুল ফুটেছে দেখে বেশ ভালো লাগত। অস্থায়ী সরকারের আমলেও বঙ্গবন্ধুর থাকার জায়গা মোটামুটি আলাদা করে সযতেœর সঙ্গে রাখা ছিল। আগে ছিল এরশাদের সরকার, তার আগে জিয়াউর রহমানের, তারও আগে আরও কয়েকজনের। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কারাবাসের স্মৃতি মনে হয় না কেউ মুছে ফেলতে চেয়েছে। জাতীয় চার নেতার স্মৃতিগৃহ দেখে পিতার স্মৃতিতে গিয়েছিলাম। এমনই হয়। আজ যে অনাদ্রিত কাল সেই মহাদ্রিত। কবি নজরুল তাই লিখেছিলেন, ‘ও কে? চন্ডাল? চম্কাও কেন? নহে ও ঘৃণ্য জীব!/ওই হ’তে পারে হরিশচন্দ্র, ওই শ্মশানের শিব।/আজ চন্ডাল, কাল হ’তে পারে মহাযোগী-সম্রাট,/তুমি কাল তারে অর্ঘ্য দানিবে, করিবে নান্দী-পাঠ।’ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ধারণ ক্ষমতা দুই-আড়াই হাজারের বেশি নয়। কিন্তু সেখানে ৫-৭ হাজার দোষী-নির্দোষ মানুষ থাকত। আমি যেমন ঢাকা জেলে জেল খেটেছি, বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী খেটেছেন, আরও কত অগণিত নেতা-কর্মী, সাধারণ মানুষ জেল খেটেছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এখন পরিত্যক্ত। সেখানে কোনো আসামি-কয়েদি নেই। এখন একমাত্র বিএনপি-প্রধান সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন। কদিন আগে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আনা হয়েছে। আমার ধারণা, আমি যেমন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘৯১ সালের ১৮ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের ফুল বেঞ্চের আদেশে মুক্তি পেয়েছিলাম, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াও জনগণের আদালতের রায়ে মুক্তি পাবেন। নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত জেলে একক কয়েদি বেগম খালেদা জিয়াকে রাখা মানবতাবিরোধী, সভ্যতাবিরোধী।

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের পক্ষ থেকে ঢাকা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। বাসা থেকে বেরিয়েছিলাম বেলা পৌনে ৩টায়। রাস্তা ফাঁকা থাকলে ১৫ মিনিট লাগে। ৪টা অথবা ৪টার ১০ মিনিটের আগে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে পৌঁছতে চেয়েছিলাম। বাসা থেকে বেরিয়েই দেখি রাস্তা জ্যাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা খামারবাড়িতে জেলহত্যা দিবসে এক আলোচনায় অংশ নিতে যাবেন। গণভবন আর খামারবাড়ি খুব একটা দূরে নয়। কিন্তু চারদিকে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় সে এক মহা কেলেঙ্কারি। মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদ, খুবই সম্মানি ব্যক্তি তারা। কিন্তু তাদের নিয়ে রাস্তাঘাটে কী যে বিড়ম্বনা বলেকয়ে শেষ করা যাবে না। ৪টা ১০ মিনিটে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে পৌঁছেছিলাম। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান দেশের বিবেক সাধারণ মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক প্রবীণ আইনজীবী বর্ষীয়ান নেতা ড. কামাল হোসেন ৫-৬ মিনিট আগে পৌঁছেছিলেন। কারণ তিনি আমাদের জেলহত্যা দিবসের আলোচনায় ছিলেন প্রধান অতিথি। আর বিশেষ করে ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবসের আলোচনা সভায় বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে চেয়েছিলাম। ২০ সেপ্টেম্বর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের বর্ধিত সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল আওয়ামী ও বিএনপি জোটের সমদূরত্বে ড. কামাল হোসেন ও ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর জাতীয় ঐক্যে আমরা আমাদের দলীয় সমস্ত শক্তি, মেধা ও মনন যুক্ত করব।
কিন্তু এত দিনে বাস্তব পরিস্থিতির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আমি যখন দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি ও সিদ্ধান্ত ঘোষণার কথা জানাতে যাচ্ছিলাম তখন অনেক নেতা-কর্মী আবার তাদের কথা বলার ইচ্ছা করল। আমাদের দল খুবই ছোট। কিন্তু আমরা আমাদের দলকে বিশুদ্ধ একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। তাই দলীয় কর্মীদের ইচ্ছাকে সম্মান দিয়ে ৩ নভেম্বর আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত ঘোষণা না করে ৫ নভেম্বর ঐক্যফ্রন্টে যোগদানের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছি।

১৩ অক্টোবর ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পরও দুই প্রবীণ নেতাকে একত্র রাখার চেষ্টা করেছি। এমনকি জেলহত্যা দিবসের আলোচনায় ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারাকে পেতে চেয়েছি। তারা আমাদের সভায় আসতে রাজিও ছিলেন। কিন্তু ড. কামাল হোসেন প্রধান অতিথি হওয়ায় ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী সাড়া দেননি এবং তিনি ২ নভেম্বর সরকারের সঙ্গে যে আলোচনা করেছেন সেখানে একটি সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি তেমন প্রাধান্য পায়নি। যেটা দিবালোকের মতো সত্য হয়ে উঠেছে সেটা হলো, যুক্তফ্রন্ট মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী দেখতে চায়, মাহী বি. চৌধুরীকে সংসদে চায়। সত্যিই এ যদি চাওয়া হয় তাহলে এর সঙ্গে তো জাতীয় চাওয়ার কোনো মিল নেই। আবার এসব দেখেও বড় বেশি বিস্মিত হয়েছি যে, যুক্তফ্রন্টের কে কী খাবেন জানতে চাইলে জনাব বদরুদ্দোজা চৌধুরী অথবা তার পক্ষ থেকে খাবার মেন্যু দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ঐক্যফ্রন্ট যথার্থই বলেছিলেন, তারা খেতে নয় দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করতে চান। খাবার খেয়ে সময় নষ্ট করার ইচ্ছা তাদের নেই। কিন্তু তার পরও আলোচনার মাঝে তাদের শরবত দেওয়া হয়েছে, খাবার দেওয়া হয়েছে। সৌজন্য রক্ষা করে তা খেয়েছেন। কিন্তু সরকার তার বিশ্বস্ততা ভঙ্গ করে খাওয়ার ছবি বাইরে ছেড়েছে। এমনিতেই অনেক সময় মানুষ খেতে বসলে তার ছবি তোলা হয় না। খাওয়ার ছবি তোলা খুব একটা ভালোও না। জাতীয় সংলাপ বা আলোচনায় খাবার টেবিলের ছবি তুলে বাইরে ছড়িয়ে দিয়ে সরকার বড় বেশি অবিশ্বাসের কাজ করেছে। ভাবীকালে এসবের জন্য ইতিহাসের কাছে অবশ্যই জবাব দিতে হবে এবং সে জবাবে বর্তমান সরকার কোনো প্রশংসা নয়, শুধু নিন্দাই পাবে। কোনো কোনো কাজে বড় খারাপ লাগে আত্মযন্ত্রণা হয়। তাই মুখ বুজে থাকতে পারি না। যা বুঝি তা বলে বুক হালকা করার চেষ্টা করি। যদিও চারদিকে এত অসংগতি, শত চেষ্টা করেও কখনো তেমন ভারী বুক হালকা করতে পারি না। বড় খারাপ লাগে, বড় কষ্ট লাগে। আজ থেকে ২০ বছর আগে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ গঠন করেছিলাম। আওয়ামী লীগের বেপরোয়া কারবার আমাকে অসন্তুষ্ট করে। দল গঠন করতে গিয়ে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলাম। তার পরও ‘৯৯-এ সখীপুরে ভোট ডাকাতি, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, এক কোটি বেকারের চাকরি, পাটের ন্যায্যমূল্য, বিনা পয়সায় সেচ ও কৃষকের ঘরে ঘরে বিনামূল্যে সার পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্র“তি পালন না করায় আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ গঠন করেছিলাম। অনেক কষ্ট করেছি। কত চেনা মানুষ অচেনা হয়েছে। একসময় যারা আমার বোচকা টেনে ধন্য হতো সময় সময় তারা না চেনার ভান করত। কত অপমান-অবহেলা কত ঔদ্ধত্য সহ্য করেছি। দীর্ঘদিন জাতীয় ঐক্যের কামনা করেছি, চেষ্টা করেছি শেষ পর্যন্ত ড. কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের পক্ষ থেকে আন্তরিক সমর্থন জানিয়েছি। প্রতিশ্র“তি দিয়েছি পায়ে পায়ে হাতে হাত কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলব এবং দেশের জনমানুষের কাক্সিক্ষত মালিকানা ফিরিয়ে দেব। আজ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রথম জনসভা। সেখানে অংশ নেব এবং জাতিকে বিভাজনের হাত থেকে ‘৭১-এর মতো ইস্পাতকঠিন জাতীয় ঐক্যে ফিরিয়ে আনার আপ্রাণ চেষ্টা করব।

আজ কদিন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা নিয়ে দেশ সরগরম। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করতে হবে।’ আসলে এখন আর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কথার কোনো মূল্য নেই। যে কারও কথার মূল্য দেওয়া যায় কিন্তু ওবায়দুল কাদের নয়। এই তো পাঁচ-সাত দিন আগেও ভীষণ হেলেদুলে সাত দফা নিয়ে কটূক্তি করছিলেন, ‘সাত দফার এক দফা নিয়েও কোনো কথা নয়, কোনো আলোচনা নয়।’ অথচ এক দফা আলোচনা হয়েছে, কাল আবার হবে। খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি। কে সরকারের কাছে প্যারোল চেয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া প্যারোল গ্রহণ করবেন, আমার তো মনে হয় না? বেগম খালেদা জিয়ার দৃঢ়তাই বিএনপির জিয়নকাঠি প্রাণশক্তি। তিনি কারাগারে যাওয়ার আগে তেমন জনপ্রিয় ছিলেন না। ৮ ফেব্র“য়ারি থেকে আজ ৬ নভেম্বর তিনি বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের হƒদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়ার চাইতে জনপ্রিয় নেতা এখন বাংলাদেশে নেই। আগরতলা মামলায় যেমন আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে পশ্চিম পাকিস্তানে নিতে চেয়েছিলেন জনসাধারণ মানেনি, তাঁকে নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে গোলটেবিলে নিতে হয়েছিল। নির্বাচনের পরে সেরকম পরিস্থিতি যে হবে, সেটা গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি। কিন্তু নির্বাচনের আগেও তেমন হয় কিনা সেটাই এখন বড় কথা। আর বিএনপি নেতা-কর্মীদের বলি ধৈর্য এবং সাহসের চাইতে এ পৃথিবীতে বড় কিছু নেই। মানুষকে বিব্রত ও বিভ্রান্ত না করে সাধারণ মানুষকে গায়ের জোর না দেখিয়ে মনের জোর এবং প্রসারতা দেখাতে পারলে জনতার জয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। ড. কামাল হোসেনের মতো একজন নেতা জাতির বিবেক তাকে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করা আজ আমাদের সবার জাতীয় দায়িত্ব। যাব সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের আহ্বানে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে চাই। দেশ থেকে অবিচার-অনাচার, দুর্নীতি চিরতরে দূর করতে চাই। গরিবের সম্পদ যাতে লুটেরা লুটতে না পারে তার জন্য দলমতনির্বিশেষে দৃঢ় পায়ে অগ্রসর হতে চাই। দয়াময় আল্লাহ জনতার বিজয় দিন।

সূত্র-শীর্ষ নিউজ

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print