
আসন্না একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষ করে ভোট গ্রহণের দায়িত্ব পেয়েছেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ১০জন। তারা সরকারি চাকরিতে থাকলেও সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও ভোটের প্রচারে সক্রিয় রয়েছে। সরাসরি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তিকে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার আইনি বাধা থাকলেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে থেকে নির্বাচন কর্মকর্তা নিয়োগ পেয়েছেন এমন অন্তত ১০ জনের নাম পাওয়া গেছে, যাঁরা সরাসরি আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। নীচে তাদের বিস্তারিত তথ্য ও পরিচয় তুলে ধরা হলো,
চট্টগ্রামে ১০ জন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ হোসেন ২০ ডিসেম্বর রাতে তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনের মহাজোটের প্রার্থী আনিসুল ইসলাম মাহমুদের পক্ষে প্রচারণা সভায় বক্তব্য দেওয়ার ছবি দেন। এর ২৩ ঘণ্টা পর তিনি একই আসনের সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে প্রশিক্ষণ নেওয়ার ছবি দেন।
তাঁর মতো অন্তত ১০ জন ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা নিয়োগ পেয়েছেন, যাঁরা সরাসরি দলীয় কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তাঁরা চট্টগ্রাম-৫ আসনের বিভিন্ন কেন্দ্রে সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী।
দলীয় সম্পৃক্ততা পাওয়া এই ব্যক্তিরা হলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবুল মনসুর সিকদার, সরকারি কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক রনি পাল, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আহসানুল হক, আওয়ামী লীগের কর্মী বঙ্গবন্ধু পরিষদের সদস্য সরোয়ার হোসেন ওরফে খোকন, শুক্কুর মিয়া, আবদুল মান্নান ও গিয়াস উদ্দিন। এ ছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের হাটহাজারী উপজেলার সভাপতি প্রয়াত মো. ইসমাইলের ছেলে মো. মুশফিক-উর-রহমানও ভোট গ্রহণের দায়িত্ব পেয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ হোসেন হাটহাজারী পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক। পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এই তথ্য জানালেও হোসেন তা অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি সরকারি চাকরি করি। আওয়ামী লীগের আদর্শে বিশ্বাস করি। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পেলে তা দলের ঊর্ধ্বে উঠে নিরপেক্ষভাবে পালন করব।’
ছাত্রলীগ নেতা আবুল মনসুর সিকদার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিসের ব্যবস্থাপক। তিনি চট্টগ্রাম-৯ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের প্রচারণায় প্রায় প্রতিদিন অংশ নিচ্ছেন। প্রচারণায় অংশ নেওয়ার কথা স্বীকার করে মনুসর বলেন, ‘ভোটের দায়িত্বের বিষয়ে কেউ এখনো ফোন দেননি। তবে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পেলে সেখানে দলকে দেখার কোনো সুযোগ থাকবে না।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরীক্ষা শাখার নিরীক্ষক মুশফিক-উর-রহমান পোলিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। মুশফিক বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাস করেন উল্লেখ করে বলেন, পারিবারিকভাবে আওয়ামী পরিবারের সন্তান। তবে নির্বাচনে নীতি-নৈতিকতা বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করবেন।
রনি পাল কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক। তবে কমার্স কলেজে উচ্চমাধ্যমিক পড়লেও দলের রাজনীতির সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তিনি। রনি বলেন, ‘আমি নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে নাম কাটানোর চেষ্টা করছি।’
জানতে চাইলে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. রুহুল আমীন বলেন, ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি, আধা সরকারি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়োগের জন্য নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সেটা এখনো চূড়ান্ত নয়। যদি কারও বিরুদ্ধে দলীয় কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগ আসে, তাহলে বাদ দেওয়া হবে।
তথ্য সুত্র- প্রথম আলো