
রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় বহুতল ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে এখন ৭৮ উন্নীত হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সুত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। তবে আহত নিহতদের পরিচয় এখনো জানা যায়নি। এদিকে, আগুনে দগ্ধ হয়ে আরো বহু আহত হয়েছেন। আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মিটর্ফোডে ভর্তি আছেন।
বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ১০টা ৪০ মিনিটে আগুনের সূত্রপাত হয়।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, পুরাতন জেলখানার পুকুর ও সিটি কর্পোরেশনের পানি সরবরাহ করা গাড়ি থেকে পানি নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করা হচ্ছে। আশপাশের বাড়ি থেকে প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি পাওয়া যাচ্ছে না।
আরও জানা যায়, যে ভবনটিতে প্রথমে আগুন লেগেছে সেটি সাত তলা। নাম-ওয়াহেদ ম্যানশন। ভবনটির নিচতলায় কেমিক্যাল গোডাউন এবং প্লাস্টিক তৈরির উপকরণের দোকান রয়েছে। ভবনটির পাশের ওয়াহিদ মঞ্জিল, আমানিয়া হোটেল, রাজ হোটেল এবং উল্টা পাশের চারটি বাসায় আগুন ছড়িয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের পরিচালক জানায়, আগুনে ৩৭ জন ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুইজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, ঢামেক বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক হোসাইন জানান, দগ্ধ ১০ জন হাসপাতালে এসেছেন। তাদের মধ্যে চার জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, তাদের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, মৃতের এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। প্রাথমিকভাবে কয়েকজনের মরদেহ উদ্ধার হলেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আসতেই একের পর এক উদ্ধার হচ্ছে নিথর ঝলসানো দেহ।
আজ বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৪টা ৫২ মিনিটে অগ্নিকাণ্ডস্থলে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সাঁটানো এক বোর্ডে ৪১ মরদেহ উদ্ধারের তথ্য দেওয়া হয়। সেখানে আরও বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ বা আহত হয়ে ৪১ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক (অপারেশন, মেনটেন্যান্স) দিলীপ কুমার ঘোষ জানান, এখন পর্যন্ত ৪৮ জনের মরদেহ মিলেছে। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে চকবাজারের নন্দ কুমার দত্ত রোডের শেষ মাথায় মসজিদের পাশে ৬৪ নম্বর হোল্ডিংয়ের ওয়াহিদ ম্যানসনে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। এলাকাবাসী বলছে, ওই ভবনের কারখানা থেকে আগুন ছড়িয়েছে। কারও কারও মতে, বিকট শব্দে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর আগুন ছড়ায়। ওয়াহিদ ম্যানসনের নিচতলায় প্লাস্টিকের গোডাউন ছিল। ওপরে ছিল পারফিউমের গোডাউন।
এ আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি স্টেশনের ৩৭টি ইউনিট। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা রাত ৩টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন বলে জানায় ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুম। একটার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন।
সাড়ে ৩টার দিকে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান বলেন, এখানে আসার রাস্তাটির দু’পাশই সরু। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি সহজে ঢুকতে পারেনি। তবে শেষ পর্যন্ত কয়েকঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছি।
তিনি বলেন, ভবনে দাহ্য পদার্থ থাকার কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। মোট পাঁচটি ভবনে আগুন লেগে যায়। এখনো আমাদের কাজ চলছে। আমরা কাজ শেষে সার্চ করবো। সার্চ করার পর জানতে পারবো কোনো মরদেহ আছে কি-না।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান বলেন, এখানে প্লাস্টিকের জিনিসপত্র বানায়। বডি স্প্রেও এখানে বানানো হয়। বডি স্প্রে তৈরির দাহ্য পদার্থে আগুন বেশি ছড়িয়েছে।