
মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর রাতেই ফাঁসি কার্যকর করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। তাকে তওবা পড়াবেন কারা মসজিদের ইমাম মুফতি হেলাল উদ্দিন।
শনিবার দিবাগত রাত ১০ টা ১ মিনিটে তার ফাঁসি কার্যকর করাতে হতে পারে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে বিকেল ৩টার ৩৬ মিনিটে তার সঙ্গে পরিবারের সদস্যারা কারাগারে প্রবেশ করেছে। গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে পাঁচটি মাইক্রোবাসে তারা আসেন। এতে সদস্য সংখ্যা ৪৩ জনের বেশি হবে বলে জানানো হয়।
এর আগে তার ফাঁসির নির্বাহী আদেশ কারাগারে পৌঁছেছে। ফাঁসি কার্যকরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে দু’টি ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কাশিমপুর কারাগার-২-এর জেলার নাশির আহমেদ গণমাধ্যমকে বিষয়টি জানান।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকরে সকল প্রকার প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
শনিবার দিবাগত রাত ১০ টা ১ মিনিটে ঝুলিয়ে দেওয়া হতে পারে ফাঁসির কাষ্ঠে। ফাঁসি জন্য কাশেমপুর ও তার আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

কারাকতৃপক্ষ কর্তৃক নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, মীর কাশেম প্রাণ ভিক্ষা চাইবেন না। এছাড়া তার পরিবারকে শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে সাক্ষাৎ কারা জন্য ডাকা হয়েছে। কারাগারে দু’টি ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ফাঁসির বিষয়টি এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত না হলেও এটুকু বলা য়ায় রাতেই ফাঁসি হওয়ার সম্ভবনা বেশি রয়েছে।
ফাঁসি কার্যকরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে দু’টি ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কাশিমপুর কারাগার-২-এর জেলার নাশির আহমেদ গণমাধ্যমকে বিষয়টি জানান।
কড়া নিরাপত্তা কাশিমপুরে
অন্যদিকে মীর কাসেমের ফাঁসির রায়কম কার্যকর করাকে কেন্দ্র করে গাজীপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকাকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা কাশিমপুর কারাগারের সড়কে এবং আশপাশের এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন। সেই সঙ্গে রয়েছে কমিউিনিটি পুলিশের সদস্যরা।
গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ জানান, শুধু কাশিমপুর এলাকা নয়, নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুরো গাজীপুর জেলায় নেয়া হয়েছে। এজন্য টঙ্গি, স্টেশন রোড, বোর্ড বাজার, ভোগড়া বাইপাস মোড়, চান্দনা চৌরাস্তা, গাজীপুর শহর, রাজেন্দ্রপুর, কোনাবাড়ি, চন্দ্রা এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এসব এলাকায় সর্বাত্মক সতর্কতা বজায় রাখার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, রায়কে কেন্দ্র করে পুরো এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কাশিমপুর কারাগারের সামনে মূল কারা ফটকে বাড়ানো হয়েছে অতিরিক্ত কারারক্ষীর সংখ্যা। কাশিমপুর কারাগারে প্রবেশের প্রধান সড়কের সামনে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক থেকে কারাগারের প্রধান ফটক পর্যন্ত সড়কের ৫টি স্থানে নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়েছে। পুলিশ সদস্যরা এসব চৌকিতে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেছেন। পাশাপাশি অবস্থান নিয়েছেন র্যাব সদস্যরা। তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে চৌকিগুলো পার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
কারাগারের মূল ফটক থেকে অন্তত ২০০ গজ দূরে গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য স্থান করে দেয়া হয়েছে। সেখান থেকে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল সরাসরি সম্প্রচারের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সকাল থেকে বিপুল সংখ্যক গণমাধ্যম কর্মী কারাগারের সামনে গিয়ে উপস্থিত হন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষে গঠিত খুনি বাহিনী আলবদরের কমান্ডার ছিলেন মীর কাসেম। সেখানে নির্যাতনকেন্দ্র খুলে স্বাধীনতাকামীদের ধরে এনে অত্যাচার ও হত্যার অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও আপিল বিভাগে।
২০১৪ সালের নভেম্বরে মীর কাসেমকে দুটি অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে গত ৮ মার্চ কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিনকে হত্যার দায়ে জামায়াত নেতার ফাঁসির আদেশ বহাল রাখে আপিল বিভাগ। মীর কাসেম এই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করলে গত মঙ্গলবার তা খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ। এর তিন দিন পর মীর কাসেম জানান, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার সুযোগ নেবেন না তিনি।
২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির মধ্য দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে প্রথম দণ্ড কার্যকর হয়। এরপর একে একে দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ (একই দিন কার্যকর হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসিও) ও জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকর হয়।
একই অপরাধে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগ করছেন।