পূজন সেন, বোয়ালখালী :
‘বোয়ালখালীর কোঁআল হারা বছরই খালি। নির্বাচন আইয়্যের যার, আঁরার কথা কনে উনের। ভোট আইলে ত বোত রহম কথা উনা যা, পরে খবর ন থা’ (বোয়ালখালীর কপাল সারা বছরই খালি। নির্বাচন আসে যায়। আমাদের কথা কে শোনে। নির্বাচন আসলে অনেক রকম কথা শোনা যায়, পরে খবর থাকে না )। কথা গুলে চাটগাঁর আঞ্চলিক ভাষায় বলছিলেন বোয়ালখালী উপজেলার একটি চায়ের দোকানে বসা ষাটোর্দ্ধ আবু হাশেম।
তিনি বলেন, ‘বাদল ভালা মানুষ আছিল। যেঁ-ত্তে এ্যাঁ-ত্তে কথা কইত পাইরতাম। এ-রইম্যা মানুষ ত ন দেই’র। আঁ-র বাড়ির সবুরইজ্যার পোঁয়াও নেতা অই গিয়ে। কথা ন উনে, কাজ কামও ন গরে। বই বই খাঁ।’(প্রয়াত সাংসদ বাদল ভালো মানুষ ছিলেন। যখন তখন কথা বলতে পারতাম। তার মতো মানুষ দেখছি না। আমাদের বাড়ির সবুরের ছেলেও নেতা হয়ে গেছে। কথা শুনে না, কাজ করে না। বসে বসে খায়।)
চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ নির্বাচনে ভোট কাকে দিবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আঁরার খবর যিবা লইবু, যার কাছে আঁরা যাইত পাইরয্যুম, কথা কইত পাইরয্যুম তারে ভোট দিউম। উন্নিদি, অন ত বলে ভোট দ-ন ন পরে। তারপরও যাইয়ুম চাই।’ (আমাদের খবর যে নিবে, যার কাছে আমরা যেতে পারবো, কথা বলতে পারবো তাকে ভোট দেবো। শুনেছি, এখন তো বলে ভোট দিতে হয় না। তারপরও যাবো দেখি।)
নাগরিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে যিনি পারবেন এমন ব্যক্তিকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার কথা জানালেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবুল কালাম।
২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) কার্যকরী সভাপতি মঈন উদ্দিন খান বাদল। এ নিয়ে তিনি এ আসনে টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গত ৭ নভেম্ব^র ভারতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে এ আসন শূণ্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তাঁর মৃত্যুর পরপরই এলাকার নতুন সংসদ সদস্য কে হবেন তা নিয়ে সর্বত্র আলোচনা শুরু হয়।
তাঁর মতো গণমানুষের কাছের মানুষ জনপ্রতিনিধি হবেন এমন প্রত্যাশায় বুক বাঁধে এলাকাবাসী। শোকের মাঝেও ছিলো বাদলের আসনের উত্তসূরী কে হচ্ছেন তা নিয়ে জল্পনা কল্পনা। শেষতক এ আসনে উপ-নির্বাচনের সময় বেঁধে দিয়ে ঘোষণা হয় উপ নির্বাচনের তফশীল।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফশীল অনুযায়ী চট্টগ্রাম-৮ আসনে উপ নির্বাচন আগামী ১৩ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে ৮ প্রার্থী অংশ নিলেও গত ১৫ ডিসেম্বর দুই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাইয়ের দিন ঋণ খেলাপির অভিযোগে বাতিল করে দেয় নির্বাচন কমিশন। ওইদিন ৬ প্রার্থী মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছেন নির্বাচন কমিশন।
মনোনয়ন বাতিল হওয়া প্রার্থীরা হলেন গণফ্রণ্টের উত্তম চৌধুরী ও জাপার প্রার্থী জিয়া উদ্দিন বাবলু। তবে মনোনয়ন ফিরে পেতে আপিল করার কথা জানিয়েছেন জিয়া উদ্দিন বাবলু।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেন ১৯জন প্রার্থী। বিএনপি থেকে মনোনয়ন চান ৩প্রার্থী। এরমধ্যে নৌকার প্রার্থী কে হচ্ছেন তাও নিয়ে বিরাজ করে টানটান উত্তেজনা।
গত ১০ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের এক সভায় দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোছলেম উদ্দিন আহমদকে মনোনীত করেন আওয়ামী লীগ। মোছলেম উদ্দিন দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। নগর, জেলা, উপজেলার আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দরা সক্রিয় হয়ে ওঠেন মোছলেম উদ্দিনের পক্ষে।
অন্যদিকে বিএনপি’র মনোনয়নে প্রার্থী হন দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান। তবে বিএনপি থেকে সরে আসা সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান মোরশেদ খান স্বতন্ত্রপ্রার্থী হওয়ার বাসনায় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করলেও শেষতক তা জমা দেননি।
এদিকে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনি মাঠে হাওয়া গরম করে দেন জিয়া উদ্দিন বাবলু। তবে তাতে ভাটা পড়ে যায় গত ১৫ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনের মনোনয়ন যাছাই-বাচাইয়ের দিন। ঋণ খেলাপির আপত্তিতে বাতিল হয়ে যায় মনোনয়নপত্র। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতায় ফিরে আসতে তিনি আপিলের কথা জানিয়েছেন।
এছাড়া নির্বাচনি মাঠে রয়েছেন বাংলাদেশ ন্যাশানালিস্ট ফ্রণ্টের(বিএনএফ) প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ, ইসলামিক ফ্রণ্টের প্রার্থী ফরিদুল আলম, ন্যাপের প্রার্থী বাপন দাশগুপ্ত ও স্বতন্ত্রপ্রার্থী এমদাদুল হক।