
জেলার সন্দ্বীপ উপজেলায় সরকারী চাল আত্মসাতের অভিযোগে স্থানীয় মগধরা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামকে গ্রেফতারের পর কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে বুধবার (১৫ এপ্রিল) রাতে তার বাড়ী থেকে আত্মসাতকৃত ২২০ কেজি সরকারি চাল উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত রফিকুল ইসলাম মগধারা ইউনিয়নের সরকারি চালের ডিলার বলে পুলিশ জানায়।
সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ শরীফুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আরো খবর- সন্দ্বীপে চাল বিতরনে অনিয়ম: ডিলারশীপ হারাচ্ছে মনছুর ও রফিকুল
জানাগেছে, বাংলাদেশ সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসুচীর আওতায় সন্দ্বীপে নিয়োগকৃত ডিলার রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে কার্ডধারীদের চাল ওজনে কম দেওয়ার বিষয়টি প্রমানীত হওয়ায় উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রবীন্দ্র লাল চাকমা নিজে বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে সন্দ্বীপ থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ এর ২৫ এর ১ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। (যার মামলা নং ৬/১৫)।

মামলার প্রক্ষিতে সন্দ্বীপ থানার সাব ইন্সপেক্টর মোঃ কাজল মিয়া তার ফোর্স নিয়ে রফিকুল ইসলামকে আটক করে থানা হাজতে প্রেরন করেন। পরে গতকাল বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে হাজির করলে আদালত জেল হাজতে পাঠিয়ে দেন।
ওসি শেখ শরিফুল ইসলাম বলেন, খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা আসামী ধরেছি এবং তার অতিরিক্ত খাদ্য জব্দ করেছি। তাকে কোর্ট হাজতে প্রেরন করে তার রিমান্ডের আবেদনও করেছি। রিমান্ড মন্জুর হলে তার স্বীকারোক্তি নিয়ে কম দেওয়া চাল উদ্ধার করে এবং জব্দকৃত চাল গুলো নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে যারা কম পেয়েছে তাদের মাঝে বিতরন করে দেবো।
খাদ্য নিয়ন্ত্রক রবীন্দ্রলাল চাকমা বলেন, স্থানীয় লোকজনদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে রফিকুল ইসলামের গোডাউন পরিদর্শনে গেলে চাউল বিতরনের পর ২২০ কেজি অতিরিক্ত পাই। এবং ৪৬৯ জন উপকারভোগীকে সে ২ কেজি করে চাল কম দিয়েছে বলে নিজে স্বীকার করে। আমরা তাৎক্ষনিক তার গোডাউন সিলগালা করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিদর্শী সম্বৌধী চাকমা সহ তার লাইসেন্স বাতিল করে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার জন্য মামলা দায়ের করেছি।
এদিকে একই উপজেলার সারিকাইত ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আসিফ মেম্বারের বিরুদ্ধে চাল কেলেঙ্কারীর অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, গরিবের জন্য সরকার ঘোষিত ১০ টাকা দরে ৩০ কেজি চাল বিতরনে ব্যাপক অনিয়ম করছেন তিনি। ৩০ কেজি চালের জন্য ৩০০ টাকা নিয়ে তিনি মানুষকে ২৪ কেজি চাল দিয়ে বিদায় করে দিচ্ছেন ।
অভিযোগ উঠেছে তিনি সারিকাইতে চালের ডিলার নন, প্রায় ৩ বছর ধরে তার স্ত্রী রাজিয়া সুলতানার নামে তিনি চালের ডিলারশীপ নিয়ে নিজেই পরিচালনা করছেন, সরকারি চাল বস্তা থেকে বের করে সেখান থেকে ২৪ কেজি করে সবাইকে অন্য বস্তায় দিচ্ছেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রতিবার চাল বিতরণে অনিয়ম করে তিনি বছরে ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ।
এ বিষয়ে সারিকাইত ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোঃ মিজান বলেন, এটা ৩০ কেজির বস্তা সরকার পাঠাচ্ছে ৩০ কেজির বস্তাই দিয়ে দেয়ার কথা, কিন্তু ওনারা বস্তা খুলে অন্য বস্তায় চাল দিচ্ছে । আমার ওয়ার্ডের ২ জনের চাল ওজন করে দেখলাম সেখানে ৩০ কেজির বদলে ২৪ কেজি ২০০ গ্রাম চাল আছে, এটার ডকুমেন্ট আমার কাছে আছে ।
অপর এক ইউপি মেম্বার বলেন, মাসখানেক আগে একটা মিটিংয়ে আমি আসিফ মেম্বারকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম তিনি কত কেজি চাল দেন, বললেন ২৫ কেজি, কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন আমার পোষায় না। এটা কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত জনপ্রতিনিধির বক্তব্য হতে পারেনা । ডিলারশীপ পাবার পর থেকে সারিকাইতে মানুষ চাল পায় ২৫ কেজি মাপ দিলে হয় ২২ কেজি।
তিনি আরো বলেন, আসিফ মেম্বার বেপরোয়া ভাবেই এসব অনিয়ম করে যাচ্ছেন । রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাবে সব অবৈধ কর্মকান্ড করে পার পেয়ে যাচ্ছেন । তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চায়না ।
অপর একজন ভুক্তভোগী জানান, আমরা সরকারি বস্তায় পাইনা , বাড়িতে এসে ওজন করে দেখলাম ২৪ কেজি , অথচ আমাদের কাছ থেকে ৩০ কেজির জন্য ৩০০ টাকা বরাবর নিয়েছে। আজ কয়েক বছর যাবৎ আমরা এমন নিগ্রহের শিকার হচ্ছি ।
অনিয়মের বিষয়টি জানতে চাইলে অভিযোগ গুলো উড়িয়ে দিয়েছেন আসিফ মেম্বার। তিনি বলেন, আমাদের চাল দেয়া শেষ হয়ে গেছে, এখন ফেসবুকে কিছু ব্যাক্তি আমাদের বিরুদ্ধে গ্রূপিং করতেছে, আমি আজকে গোডাউনে বলে দিয়েছি আমি আর মাল ও নিব না ।
সন্দ্বীপ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রবীন্দ্র লাল চাকমা বলেন, ওরা বস্তা খুলবে কেন ? বস্তা খোলার কোনো নিয়ম নেই ৩০০ টাকা নিয়ে এক বস্তায় ৩০ কেজি চাল দিয়ে দেয়ার কথা। এ বিষয়ে আমার কাছে এখনো অভিযোগ এসেছে, আমরা সারিকাইতের আসিফ মেম্বারের স্ত্রী রাজিয়া সুলতানার বিষয়ে অভিযোগের প্রমান পেয়েছি। চাউল বিতরন শেষ হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবো।