
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে কাজ না করেই সরকারী ৪৬ প্রকল্পের টাকা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে । উপজেলার দাঁতমারা ইউনিয়নে ত্রাণ ও দূর্যোগ মন্ত্রানালয়ের (টিআর) বিশেষ বরাদ্ধের ৪৬টি প্রকল্পে এ অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২নং দাঁতমারা ইউপি চেয়ারম্যান জানে আলমের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেছেন উক্ত ইউনিয়নের দুই ইউপি সদস্য।
অভিযোগে তাঁরা জানান কাজ না করেই এসব প্রকল্পের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা তারিকুল ইসলামের যোগসাজসে ভূয়া মাস্টার রুল তৈরি করে এসব টাকা উত্তোলন করা হয় জানিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে অভিযোগ দিয়েছে ২নং ওয়ার্ডের সদস্য সুব্রত দে ও ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য আনোয়ার হোসেন। বিষয়টি দুদকসহ একাদিক সংস্থা তদন্ত করছে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার বরাবওে দায়ের করা লিখিত অভিযোগে বিষটি সুষ্ট তদন্ত এবং শাস্তির দাবী করে অনুলিপি পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসক, দুদকসহ সরকারী ১৪টি দপ্তরে।
অভিযোগে জানা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন ও রক্ষনাবেক্ষন (টিআর) কর্মসুচীর আওতায় ফটিকছড়ি উপজেলায় ৬৯টি প্রকল্পের জন্য ৫৬ লাখ ৮৩ হাজার ২৯৪ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্যে ৪৬টি প্রকল্পই দাঁতমারা ইউনিয়নে।
এ ৪৬ প্রকল্পের ২৩টি হচ্ছে ইউনিয়নে বিভিন্ন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়নে প্রকল্প বাবদ ৭৯ হাজার ৭৮২টাকা করে প্রত্যেকটির জন্য বরাদ্দ প্রদান করা হয়। এ ছাড়া বাকী প্রকল্প গুলোতে কোনটি ফোরকানিয়া মাদরাসার উন্নয়ন আবার কোনটি রাস্তা, ব্রিজ বা কবরস্থানের উন্নয়ন প্রকল্প নামে উল্লেখ করা হয়। প্রকল্প গুলো ২৮ জুন ২০১৬ এর মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে বলে মাস্টাররুল জমা দেওয়া হয়।

এ দিকে গত ২২ জুন ফটিকছড়ির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম ”উপজেলা প্রশাসন ফটিকছড়ি” নামক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক পেইজে একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। যাতে উপরোক্ত প্রকল্পের বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করে প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগনের তদারকি করণ এবং কোন ধরনের অসঙ্গতি দেখলে তা সরাসরি বা যে কোন মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করার অনুরোধ জানানো হয়। এ জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মোবাইল নম্বর ও ই-মেইল আইডিও দেয়া হয়। এ ঘোষনা পাওয়ার পরই এলাকার লোকজন বিভিন্ন ভাবে খোজ খবর নিতে থাকেন। এতেই ধরাপড়ে বিশাল অংকের টাকা আত্মসাতের বিষয়।
অভিযোগকারীরা আরো জানান, এ প্রকল্প বরাদ্দ পাওয়ার পর চেয়ারম্যান জানে আলম তাঁর সাবেক সচিব এমরান ও উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা তারিকুল ইসলামের যোগসাজসে কোন কাজ না করেই প্রকল্পের সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করে।
তবে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম নিজের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করে বলেন, মাস্টার রোলের অনুকুলে প্রকল্পের বরাদ্ধ টাকা দেওয়া হয়েছে। সেখানে আমাদের কোন হাত নেই।
প্রকল্প বৈধ করতে চেয়ারম্যান গত ১৭ আগষ্ট ইউনিয়নের ২৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ইউপি কার্যালয়ে ডেকে পাঠান। তাদের প্রত্যেক স্কুলকে মাত্র ১০ হাজার টাকা করে প্রদান করে। ইউনিয়নের এসব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগন প্রকল্পের বিষয়ে অবহিত হওয়ার পর প্রকল্পের বাকি টাকার হিসাব চাইলে তিনি বলেন, প্রকল্পের টাকা গুলো বড় কর্মকর্তারা কেটে রেখে দিয়েছেন।
এদিকে ২৩টি স্কুলের কোনটিতেই সরকারী বরাদ্দকৃত ৭৯ হাজার টাকার কোন উন্নয়ন কাজ হয়নি। সরেজমিন বেশ কয়েকটি স্কুল পরিদর্শনকালে এ ধরনের কোন প্রকল্পের অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়নি। এ ছাড়া বাকী প্রকল্প গুলোর ও একই অবস্থা।

ইউনিয়নের নিচিন্তা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সুব্রত দে বলেন, ৭৯ হাজার টাকার সরকারী কোন টিআর প্রকল্প উক্ত বিদ্যালয়ে বাস্তবায়িত হয়নি। চেয়ারম্যান মাত্র ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন। একই কথা বলেছেন ধূলিয়াছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা মুজিবুল হক মজুমদার।
এছাড়া দাঁতমারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু তালেব বলেন, চেয়ারম্যান সাহেব আমাদেরকে ডেকে ১০ হাজার টাকা অনুদান দিয়েছেন। স্কুল পরিচালনা কমিটিকে অবহিত করে যা দিয়ে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেনী কক্ষের মেরামত কাজ করানো হয়েছে।
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, কাজ না করেই প্রকল্পের টাকা আত্মসাদের বিষয়টি শুনেছি। তাই ওই ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী প্রনবেশ মহাজনকে বিষয়টি তদন্ত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের সহকারী বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) সালমা ফেরদৌস সাংবাদিকদের বলেন, ৪৬টি টিআর প্রকল্পের টাকা আত্মসাদের অভিযোগ পেয়েছি। গুরুত্বসহকারে বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

অভিযুক্ত ২নং দাতমারা ইউপি চেয়ারম্যান মো. জানে আলম মুঠোফোনে বলেন, গত পাঁচ বছর যে ভালো কাজ করেছি, সেই কাজ গুলোকে ঘায়েল করতে একটি গ্রুপ এই অপপ্রচার গুলো করছে। তারা একটি ক্যাসেট বের করতে চাইছে এরকম- ”দেইকছুনি তোমগো চেয়ারম্যানে নৌকা কিনি আইনছে টিয়াদি, অন কাম কইরতে পাইরছেনি ?” এখানে কোটি টাকার কাজ আমি করেছি। এখন ৮টি ব্রীজ আমার টেন্ডারে গেছে। এগুলোতো আমাকে চেহারা দেখে দেয়নি। এটি তো আমি কাউকে বলতে পারিনা। মন্ত্রী-এমপি থেকে কেউ কিছু প্রজেক্ট কেমনে আসে তো জানেন। আর ব্যক্তিগত তহবিল থেকে স্কুল-মাদ্রাসায় দেওয়া টাকার সাথে টিআর প্রকল্পের কোন সম্পর্ক নেই।
গত ২৮ জুন ঐ প্রকল্পের (১৫-১৬ অর্থ বছর) সকল কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এই চেয়ারম্যান জানান, প্রকল্পের কাজ এখনো শেষ হয়েছে কিনা আমি জানিনা। এই প্রকল্পের সাথে আমি ব্যক্তিগত ভাবে সংশ্লিষ্ট নই। যখন একটি অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে, তখন আমিও একটি তদন্ত কমিটি করে খোঁজ নিচ্ছি।