
১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিল খাগড়াছড়ি দুর্গম পার্বত্যঞ্চলে মহালছড়িতে পাক হানাদার ও তাদের মদদপুষ্ট মিজোদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদের বীর উত্তম। ১৯৭১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সরকারি কর্মস্থল পাকিস্তানের হায়দ্রাবাদ থেকে ছুটিতে নিজ বাড়ি ঢাকায় এসেছিলেন ৪০ ফিল্ড রেজিমেন্টের অফিসার ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদের (ইকবাল)।

প্রিয়তমা নববধূ আর কাদেরের হাতে লাগানো বিয়ের মেহেদীর রঙ তখনও ম্লান হয়ে যায়নি। এরই মধ্যে ২৫ মার্চের কালো রাত থেকে সমগ্র দেশে (পূর্ব বাংলা) শুরু হয় পাক হানাদার নিরস্ত্র-নিরীহ বাঙালি নিধনযজ্ঞ। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণায় সাড়া দিয়ে তরুণ সৈনিক কাদের ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। তিনি যোগ দেন এক নম্বর সেক্টরে। ’৭১ সালের ২ এপ্রিল ক্যাপ্টেন কাদের পদার্পণ করেন সীমান্তবর্তী শহর রামগড়। এখানে এসে রামগড়কে শত্র“মুক্ত রাখার লক্ষ্যে তিনি প্রথমেই এক সফল অপারেশন পরিচালনা করে উড়িয়ে দেন ধুমঘাট রেলওয়ে ব্রিজ।

এ অপারেশনে তাঁর সঙ্গে ছিলেন ইপিআর হাবিলদার কাশেম ও তার প্লাটুন সদস্য। রামগড় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তিনি সর্বপ্রথম যুবযুদ্ধ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করেন। ইপিআর সুবেদার একে এম মফিজুল বারীসহ কয়েকজন ইন্সট্রাক্টর সঙ্গে তিনি নিজেই গেরিলা প্রশিক্ষণের ভার নেন।

’৭১ এর ২৭ এপ্রিল সকাল প্রায় নয়টায় মহালছড়িতে অবস্থানকারী মুক্তিযোদ্ধারা শত্র“ আক্রান্ত হয়। পাকিস্তানি ও মিজো বাহিনীর শত্র“রা ছিল দলে ভারি। তাদের দলে ছিল পাক সৈন্যদের একটি নিয়মিত কমান্ডো কোম্পানি, আর ছিল ১৫/১৬শ মিজোর দুটি ব্রিগেড। এ অবস্থায় মিজোরা অত্যন্ত হিংস্র হয়ে সামনে অগ্রসর হতে থাকে। আর মুক্তিযোদ্ধারা ক্রমেই বিপজ্জনক অবস্থার মুখোমুখি হয়ে পড়ে। শত্রুরা চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে মুক্তিযোদ্ধাদের। গর্জে ওঠা পাক সেনাদের মেশিনগান।
ক্যাপ্টেন কাদের লুটিয়ে পড়েন মাটিতে। তখনও চলছিল প্রচণ্ড যুদ্ধ। এ গুলিবৃষ্টির মধ্যেই সহযোদ্ধা শওকত (ঢাকা ভার্সিটির ছাত্র), ফারুক ও সিপাই ড্রাইভার আব্বাস আহত ক্যাপ্টেন কাদেরকে বহন করে নিয়ে আসে একটু নিরাপদ স্থানে। সেখান থেকে রামগড় নিয়ে আসার পথে গুইমারায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ২৭ এপ্রিল শেষ বিকেলে শহীদ কাদেরের মরদেহ রামগড় এসে পৌঁছলে সহযোদ্ধাসহ সবার মাঝে নেমে আসে শোকের ছায়া।
গত মঙ্গলবার শহীদ ক্যাপ্টেন কাদের বীর উত্তমের শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে রামগড়স্থ শহীদ ক্যাপ্টেন আফতাবুল কাদের বিদ্যা নিকেতনের উদ্যোগে শহীদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, স্মরণসভা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। অন্য দিকে শহীদের কবর সংলগ্ন মাস্টারপাড়া আজিজিয়া মসজিদ পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়।