
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায় ডাকাতির প্রবাসীর বাড়ীতে উদ্দেশ্যে প্রবেশ করে বাড়ীর গৃহবধূদের ধর্ষণের ঘটনায় আদালত পৃথক দুই ধারায় ৫ আসামীকে দুইবার করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের (প্রত্যেককে ৬০ বছর) এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই ঘটনায় অভিযোগ প্রমান না হওয়ায় আব্দুল হান্নান মেম্বার নামে একজনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৬-এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. মঈন উদ্দীন এ রায় দেন।

আসামীরা হলেন- মিজান মাতব্বর, আবু সামা, মহিদুল ইসলাম, জহিরুল ইসলাম, ইলিয়াছ শেখ ও আব্দুল হান্নান ওরফে হান্নান মেম্বার। এদের মধ্যে আব্দুল হান্নান খালাস পেয়েছেন। দণ্ডিতদের মধ্যে ইলিয়াছ শেখ পলাতক বাকীরা কারাগারে আটক আছেন।
আরও খবর: কর্ণফুলীতে ৪ নারী ধর্ষণ, আদালতে আবু সামার জবানবন্দি
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, চার বছর আগে আসামীরা এক বাড়িতে ঢুকে ডাকাতি ও নারী ধর্ষণের মামলায় পৃথক ধারায় পাঁচ জনকে দুই বার করে আদেশ দিয়েছেন আদালত। এর ফলে প্রত্যেক আসমিকে ৬০ বছর করে কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।
ঘটনার বিরণে প্রকাশ- ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর গভীর রাতে কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের এক বাড়িতে ডাকাতির সময় তিন প্রবাসী ভাইয়ের স্ত্রী ও তাদের এক বোনকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে। ধর্ষণের শিকার নারীরা ঘটনার পরদিন মামলা করতে গেলে ঠিকানা জটিলতার কথা বলে মামলা নিতে গড়িমসি করে পুলিশ। পরে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর হস্তক্ষেপে পাঁচ দিন পর মামলা নেয় পুলিশ। প্রথমে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয় তিনজনকে।
আরও খবর: কর্ণফুলীতে ৪ নারীকে ধর্ষণ ঘটনায় আরো এক যুবক আটক
মামলা নিতে পুলিশের গড়িমসির অভিযোগ ওঠার পর বিভিন্ন সংগঠন থেকে কর্ণফুলী থানার ওসি সৈয়দুল মোস্তফাকে প্রত্যাহারের দাবি তোলা হয়। নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (বন্দর) হারুণ উর রশিদ হাযারি এক সংবাদ সম্মেলনে থানা পুলিশের ‘আংশিক’ ব্যর্থতার কথা স্বীকারও করেন।
এরপর পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে মামলার তদন্তভার যায় পিবিআইয়ের হাতে। পিবিআই সকালে দায়িত্ব নেওয়ার পর বিকালে আসামী মিজান মাতুব্বরকে গ্রেপ্তারের করে। মিজান ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।
এর আগে কর্ণফূলী থানা পুলিশ আবু, ফারুকী ও বাপ্পী নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় এবং আবুকে শনাক্ত করার জন্য টেস্ট আইডেন্টিফিকেশন প্যারেডের আবেদন করে।
ঘটনার ২১ মাস পর ২০১৯ সালের ৩০ আগস্ট তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) চট্টগ্রাম মহানগরের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, ডাকাতির সময় চার নারীকে ধর্ষণের কথা বলা হলেও আসামিদের জবানবন্দি, ভিকটিমদের সাক্ষ্য থেকে জানা গেছে— চার জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করলেও দু’জনকে তারা ধর্ষণ করতে পেরেছিল। অভিযোগপত্রে ছয় জনকে আসামি করা হয়, যাদের মধ্যে পাঁচ জনকে পিবিআই গ্রেফতার করেছিল।
পরে ২০২০ সালের ২২ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। অভিযোগ প্রমাণে মোট ২১ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয় বলে আদালত সূত্র জানায়।