ফন্ট সাইজ

শেয়ার করুন

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print

পাচার হচ্ছে কিশোরী তরুণী অাসছে ইয়াবা!

সংবাদটি পড়তে সময় লাগবে মিনিট

file-3
পাচার হচ্ছে নারী আসছে ইয়াবা।

এ দেশের তরুণী-কিশোরীদের পাচার করার বিনিময়ে লাখ লাখ পিস ইয়াবা আমদানি করার ভয়াবহ তথ্য পাওয়া গেছে। দুর্ধর্ষ মাদক ব্যবসায়ীরা পর্যটকবেশে ভ্রমণের নামে নারীদের নিয়ে কক্সবাজার, টেকনাফ কিংবা সেন্ট মার্টিন দ্বীপে যাচ্ছেন, ফেরার সময় তাদের বিনিময়ে নিয়ে আসছেন ইয়াবা। জানা যায়, গত দুই মাসে শুধু ঢাকার কয়েকটি ইয়াবা সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই অন্তত বিশ জন তরুণী পাচার হয়ে গেছে। পাচারের পর মিয়ানমারে এসব তরুণীর ভাগ্যে কী জুটছে তা আর জানা যাচ্ছে না। ঢাকার বনশ্রীর ডাকসাইটে ইয়াবা ব্যবসায়ী জামাই রাসেলের অতিসম্প্রতি দুই অভিজাত তরুণীকে পাচারের চেষ্টা ব্যর্থ হতেই ‘দিচ্ছি নারী, আনছি ইয়াবা’ কাহিনী ফাঁস হয়ে যায়।

ইয়াবাসম্রাট রাসেল ওরফে জামাই রাসেল ওরফে ভাতিজা রাসেল, ভাগ্নে রাসেল ইত্যাদি নানা নাম-পরিচয় গড়ে উঠলেও রাসেলের প্রকৃত নাম ফয়সাল ইসলাম ওরফে ফয়জুল ইসলাম রাসেল। তার বাবার নাম মফিজুল ইসলাম, বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পশ্চিম পাইকপাড়া এলাকায়। বর্তমানে কে-১৮, দক্ষিণ বনশ্রী, রামপুরায় বসবাস। রেন্ট-এ-কারের গাড়ি ব্যবহারের মাধ্যমে তিনি নিয়মিত টেকনাফ যাতায়াত করেন এবং ইয়াবা বাণিজ্য সচল রাখেন। সর্বশেষ রাসেল রেন্ট-এ-কারের একটি প্রাইভেট কার (ঢাকা মেট্রো-গ-১৭-৯৭০৭) নিয়ে কক্সবাজার থেকে ফেরার সময় নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে ইকরা নামে এক তরুণী ও বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে আটক হন।

তার পাচারের কবল থেকে পালিয়ে ঢাকায় ফিরে আসা ‘ও’ লেভেলের ছাত্রী হাইয়া ইসলাম জানান, ইকরা ও তাকে জন্মদিনের অনুষ্ঠানের কথা বলে রাসেল কক্সবাজারে নিয়ে যান। টেকনাফে নিয়েই তাদের দুজনকে মিয়ানমারের একটি স্পিডবোটে রোহিঙ্গাদের হাতে তুলে দেওয়ার পাঁয়তারা করেন। এ সময় রাস্তি নামে এক ছেলেবন্ধুর সহায়তায় হাইয়া ইসলাম ও ইকরা চৌধুরী টেকনাফ থেকে পালিয়ে কক্সবাজার ফিরে আসেন। কিন্তু রাসেল ও তার সহযোগীরা কক্সবাজারে ধাওয়া করে ইকরা চৌধুরীকে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গেলেও হাইয়া ইসলাম ঢাকায় ফিরতে সক্ষম হন। হাইয়ার মাধ্যমে পাচার কাহিনী ছড়িয়ে পড়লে রাসেল প্রায় ৫ হাজার পিস ইয়াবাসহ তরুণী ইকরা চৌধুরীকে নিয়ে ঢাকার পথে রওনা দেন। পরে ইকরার দেওয়া তথ্যানুযায়ী  ১০ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে কাঁচপুরে অবস্থান নিয়ে ইকরার অভিভাবকরা ওই গাড়িটি আটক করে কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন। পরে সোনারগাঁ থানা পুলিশ অকুস্থলে পৌঁছে ইকরার তথ্যানুযায়ী গাড়ির এসি বনেট খুলে তার ভিতর থেকে ৪ হাজার ৬০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে। কিন্তু থানায় নেওয়ার পর তথ্যদাতা ইকরা চৌধুরীকেও আসামি করে মামলা হয়ে যায়। রাসেলের পাচার চেষ্টার হাত থেকে রেহাই পাওয়া হাইয়া ইসলাম ও রাস্তিকেও একই মাদক মামলায় আসামি করেছে পুলিশ।

17-09-16-f-01-600x330
ইযাবা পাচারের সাথে জড়িত চলচ্চিত্রের নায়ক নায়িকারা।

ইকরা ও হাইয়ার অভিভাবকরা অভিযোগ করে জানান, নারী পাচারের বিনিময়ে রাসেলের ইয়াবা বাণিজ্যের খবর ধামাচাপা দিতেই পুলিশ ওই দুই তরুণীকে একই মামলায় আসামি বানিয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ইয়াবাসম্রাট রাসেলের সিন্ডিকেট গত এক মাসে আরও অন্তত চার তরুণীকে মিয়ানমারে পাচার করেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেহব্যবসায় জড়িত ‘কলগার্লদের’ বেড়ানোর কথা বলে কক্সবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়, পরে তাদের কারও সন্ধান আর পাওয়া যায় না। জানা গেছে, বাড্ডা, রামপুরা ও শাহজাহানপুর এলাকা থেকে কলগার্ল হিসেবে রাজিয়া, কুমকুম, নাসিমা, কেয়া ও ন্যান্সি নামে পাঁচজন কক্সবাজার গেলেও নাসিমা কেবল ঢাকায় ফিরতে পেরেছেন। ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কক্সবাজারে থ্রি স্টার মর্যাদার একটি আবাসিক হোটেলের নিয়ন্ত্রণে কলাতলী এলাকায় কয়েকটি সুরক্ষিত ফ্ল্যাট বাসা ভাড়ায় রাখা হয়েছে। নারী পাচারকারী ইয়াবা সিন্ডিকেটের সদস্যরা কক্সবাজারে গিয়ে এসব ফ্ল্যাট বাসায় ওঠেন। সেখানে সঙ্গে নেওয়া তরুণীদের ওপর নানা কায়দায় অত্যাচার চালিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত করে তোলা হয়, এরপর সুযোগ বুঝে টেকনাফের পথে নিয়ে যাওয়া হয়। উখিয়া ও টেকনাফের মাঝামাঝি একাধিক পয়েন্টে নামিয়ে মোটরসাইকেলে তুলে নাফ নদের তীরে নিয়ে সেসব তরুণীকে মিয়ানমারের বোটে পাচার করে দেওয়া হয়।

সীমান্তে ৩৮ কারখানা : বাংলাদেশে পাচারের জন্যই মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে ৩৮টি ইয়াবা কারখানা। এসব কারখানা থেকে প্রতিদিন ৩০ লাখেরও বেশি পিস ইয়াবা টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ির দুর্গম সীমান্তের ৪৩টি পয়েন্ট দিয়ে আসছে। গোয়েন্দা সংস্থা ও স্থানীয় অভিবাসীদের কাছ থেকে এ তথ্য জানা গেছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়, মিয়ানমারের মংডু থেকে বিভিন্ন প্রকার ফিশিং বোটের মাধ্যমে টেকনাফের স্থলবন্দর, শাহপরীর দ্বীপ, মাঝিরপাড়া, জালিয়াপাড়া, ট্রানজিট ঘাট, নাইট্যংপাড়া, সাবরাংয়ের লেজিপাড়া ও বার্মাপাড়া পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিনই দেশে লাখ লাখ পিস ইয়াবা আসছে। স্থানীয় সূত্রগুলো অভিযোগ করে জানায়, বিভিন্ন সংস্থার একশ্রেণির কর্মকর্তার সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সখ্য ও গোপন লেনদেন থাকায় ইয়াবা প্রবেশ রোধ হচ্ছে না কোনোভাবেই। স্থানীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করে জানায়, টেকনাফের সাগরদ্বীপ, নয়াপাড়া, নাজিরপাড়া, জেলেপাড়ায় প্রতি রাতে বসে ইয়াবার হাট। সেখানে মিয়ানমার থেকে আসা লাখ লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটের পাইকারি বেচাকেনা চলে। নৌকা নিয়ে নাফ নদ পেরিয়ে মিয়ানমার থেকে ইয়াবার মজুদ নিয়ে টেকনাফে ঢোকেন মিয়ানমারের আকিয়াবের মংডু এলাকার বাসিন্দা ইউসুফ, ইউনুসসহ বেশ কয়েকজন। তারা সবাই রোহিঙ্গা। টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ির দুর্গম সীমান্ত এলাকায় এই সিন্ডিকেটের একাধিক নকল ইয়াবা তৈরির কারখানা রয়েছে বলেও তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে। পাজেরোসহ দামি দামি গাড়িতে ‘প্রেস’, ‘সাংবাদিক’ বিভিন্ন এনজিও এমনকি জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক দফতরের স্টিকার লাগিয়েও অহরহ ইয়াবা পাচারের অভিযোগ রয়েছে।

হেলিকপ্টারে পাচার! : রাস্তায় রাস্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্ক নজরদারির কারণে ইদানীং কক্সবাজার থেকে ইয়াবা পাচারের ভিন্ন পথ আবিষ্কৃত হয়েছে। মাদক ব্যবসায়ীরা কক্সবাজার ও টেকনাফ থেকে হেলিকপ্টারযোগে ইয়াবা পাচার শুরু করেছেন। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, কক্সবাজার ও টেকনাফ থেকে সাগরের চিংড়ি পোনা পাঠানো হয় বাগেরহাট, সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় এলাকার চিংড়ি ঘেরগুলোয়। প্রতিদিন এসব জেলার উদ্দেশে অন্তত ১০টি হেলিকপ্টার ছাড়া হয় কক্সবাজার থেকে। ইয়াবা সিন্ডিকেটগুলো চিংড়ি পোনা বহনকারী এসব হেলিকপ্টারেই লাখ লাখ পিস ইয়াবা তুলে দিচ্ছে। পরে এসব ইয়াবা পটুয়াখালী, বাগেরহাট সাতক্ষীরা থেকে সহজেই ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। উপকূলীয় এসব জেলার কোচগুলো প্রশাসনের তল্লাশির বাইরে থাকায় উল্টো পথে ঢাকায় ইয়াবা ঢোকাতে অনেকটাই সহজতর হচ্ছে বলে জানা গেছে।

file-2
যাচ্ছে নারী অাসছে ইয়াবা।

নারীকেন্দ্রিক ইয়াবা বাণিজ্য : ইয়াবাসহ প্রথম গ্রেফতার হওয়ার সূত্রে নিকিতা হয়ে ওঠেন ইয়াবার মডেল। তার পথেই পা বাড়ান চলচ্চিত্র ও বিনোদন জগতের বেশ কয়েকজন। মূলত ইয়াবা ব্যবসায়ীরা বরাবরই ইয়াবা বিপণনের ক্ষেত্রে তরুণীদের মডেল হিসেবে ব্যবহার করেছেন। কক্সবাজারের হোটেল বে-ভিউ থেকে ইয়াবাসহ নায়িকা সিলভিয়া ওরফে চাঁদনীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এ সময় চলচ্চিত্র-প্রযোজক জি এম সরওয়ারসহ আরও চারজনকে আটক করা হয়। এর পরপরই ঢাকাই ফিল্মের আরেক পড়তি নায়িকা কেয়াকে বিপুলসংখ্যক ইয়াবাসহ গুলশানের একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে আটক করে পুলিশ। চলচ্চিত্রের পাঁচ নায়িকাসহ শোবিজের অন্তত এক ডজন গ্ল্যামার গার্ল ইয়াবা কেলেঙ্কারিতে জড়িত। ভয়াবহ এই নেশায় আসক্তদের তালিকায় চলচ্চিত্রের নায়ক, প্রযোজক ও পরিচালকের নামও রয়েছে। হালের আলোচিত একাধিক মডেল কাম অভিনেত্রী ও সংগীতশিল্পী নিয়মিত ইয়াবা সেবন করেন বলে নিশ্চিত হয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। এর আগে ইয়াবা ব্যবসাসহ ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগে গ্রেফতার হন চিত্রনায়িকা শানু, মডেল পায়েল ও রুবি। গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে তারাই ফাঁস করে দেন অন্ধকার জগতের নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। জিজ্ঞাসাবাদে নায়িকা শানু জানান, গুলশান, বনানী, উত্তরাসহ অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে গড়ে তোলা হয় জলসাঘর। সেখানে ইয়াবা ব্যবসার পাশাপাশি চলে নানা অসামাজিক কার্যকলাপ। এসব জলসাঘরের মূল আকর্ষণ থাকে শোবিজের নায়িকা, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একশ্রেণির ছাত্রী। সেখানে ইয়াবাসহ নানান মাদক বিক্রি হয়। সুন্দরী নারীর টানে ওইসব জলসাঘরে গিয়েই দ্বিমুখী নেশায় আসক্ত হচ্ছে তরুণসমাজের একাংশ।

অতিসম্প্রতি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে ৩০ হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার হন কলেজছাত্রী ম্যানিলা চৌধুরীসহ ছয়জন। গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মশিউর রহমান জানান, কমলাপুর, রামপুরা ও নাজিমউদ্দিন রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে ম্যানিলা চৌধুরী, কুলসুম বেগম, আবু তাহের, মো. খালেদ, জানে আলম ও মো. আরিফকে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে ম্যানিলা সরকারি তিতুমীর কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বলে জানান তিনি। সুত্র: বিডি প্রতিদিন।

সর্বশেষ

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে চট্টগ্রামে বিআরটিএ’র বিশেষ অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি

‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা হয়নি: প্রেস সচিব

সিরিয়ার ঋণ শোধ করবে সৌদি-কাতার

ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

প্রথম চুয়েটের রিফাত আল ইব্রাহিম ⦿কেএসআরএম অ্যাওয়ার্ড পেলেন তিন ভবিষ্যৎ স্থপতি

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করতে চায় না বাংলাদেশঃ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সন্ধ্যায় ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো উড়াল দেবে কার্গো ফ্লাইট

Facebook
X
Skype
WhatsApp
OK
Digg
LinkedIn
Pinterest
Email
Print